তাশাহুদে আঙ্গুল নড়ানোর বিধান ইসলামে প্রতিদিনের নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রতিটি নামাজের দ্বিতীয় এবং শেষ রাকাতে করা হয়। এটি গভীর আধ্যাত্মিক প্রতিফলন এবং ভক্তির একটি মুহূর্ত যেখানে আল্লাহর কাছে আমরা একত্ববাদের (তাওহীদ) ঘোষণা করি এবং তাঁর একত্বের সাক্ষ্য দেয়। তাশাহহুদের সময় যে সমস্ত কাজ করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল আঙ্গুল নাড়ানো। তবে এই প্রথার হুকুম নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি ও বিতর্ক রয়েছে। এই প্রবন্ধে, আমরা এই বিষয়ে ইসলামিক স্কলারদের বিভিন্ন মতামত অন্বেষণ করব এবং আপনাকে একটি জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য একটি বিস্তৃত নির্দেশিকা প্রদান করব।
আরও পড়ুনঃ তাশাহুদ কাকে বলে এবং তাশাহুদে বসার নিয়ম কি রকম?
তাশাহহুদ বোঝা
তাশাহুদে আঙ্গুল নড়ানোর বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে আসুন প্রথমে তাশাহহুদ কী এবং ইসলামী নামাজে এর তাৎপর্য বুঝতে পারি। তাশাহহুদ হল ইবাদতের একটি আনুষ্ঠানিক কাজ যা নামাজের শেষ বৈঠকে সম্পাদিত হয়। এই কাজের সময়, আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দিতে, তাঁর আশীর্বাদ চাইতে এবং নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর শান্তি ও দরুদ পাঠ করেন। তাশাহুদের কাজ ইসলামী প্রার্থনার একটি অপরিহার্য অঙ্গ এবং ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
তাশাহহুদে আঙ্গুল নাড়ানোর উৎপত্তি
তাশাহুদে আঙ্গুল নাড়ানোর প্রথা বহু শতাব্দী ধরে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। এই প্রথার উৎপত্তি স্বয়ং নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) থেকে পাওয়া যায়। বিভিন্ন বর্ণনা অনুসারে, নবী (সাঃ) তাশাহহুদের সময় তর্জনী তুলে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দিতেন। যাইহোক, নবী ঠিক কোন পদ্ধতিতে এই কাজটি করেছিলেন তা স্কলারদের মধ্যে বিতর্কের বিষয়। কিছু স্কলার বিশ্বাস করেন যে নবী ক্রমাগত তার আঙুল নাড়াতেন, আবার অন্যরা যুক্তি দেন যে তিনি একবার এটি নাড়াতেন।
তাশাহুদে আঙ্গুল নড়ানোর বিধান
তাশাহহুদে আঙ্গুল নড়ানোর বিধান ইসলামী স্কলারদের মধ্যে একটি বড় বিতর্কের বিষয়। এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, কিছু আলেম এটিকে তাশাহুদের একটি অপরিহার্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করে, আবার অন্যরা এটিকে একটি সুপারিশকৃত কাজ বলে মনে করেন।
আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় আঙুল দিয়ে ইশারা করতে হবে কি ? আসুন এই বিষয়ে ইসলামী স্কলারদের মতামত অন্বেষণ করা যাক।
মতামত ১: আঙ্গুল নাড়ানো বাধ্যতামূলক
কিছু ইসলামী মনে করেন যে, তাশাহহুদে আঙ্গুল নাড়ানো ওয়াজিব। তারা তাদের মতামত ইবনে মাসউদের হাদীসের উপর ভিত্তি করে, যেখানে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ শেষ তাশাহহুদে বসে, সে যেন আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তারপর তার আঙুল তুলে বলে: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'” (সহীহ মুসলিম)। এই আলেমদের মতে, এই হাদীসে “উঠানো” শব্দটি আঙ্গুল নাড়ানোর কাজকে ওয়াজিব বলে নির্দেশ করে।
মতামত ২: আঙ্গুল নাড়ানোর সুপারিশ করা হয়
অন্যান্য আলেমদের মতে তাশাহহুদে আঙ্গুল নাড়ানো একটি সুপারিশকৃত কাজ, তবে ওয়াজিব নয়। তারা তাদের মতামতের ভিত্তি এই সত্যের উপর ভিত্তি করে যে নবী সর্বদা এই কাজটি করেননি এবং এটি যেভাবে সম্পাদন করা উচিত সে সম্পর্কে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এই স্কলারদের মতে, আঙ্গুল নাড়ানোর কাজটি আল্লাহর স্মরণ বৃদ্ধি এবং তাঁর প্রতি ভক্তি প্রকাশের একটি মাধ্যম।
মতামত ৩: আঙ্গুল নাড়ানোর সুপারিশ করা হয় না
কিছু আলেম মনে করেন যে তাশাহহুদে আঙ্গুল নাড়ানো বাঞ্ছনীয় নয়। তারা যুক্তি দেখান যে হাদিসটিতে আঙ্গুল নাড়ানোর কথা বলা হয়েছে তা দুর্বল এবং তার উপর নির্ভর করা যায় না। তারা আরও নির্দেশ করে যে নবীর সাহাবীগণ সর্বদা এই কাজটি করেননি এবং এটি কুরআনে উল্লেখ নেই। এই স্কলারদের মতে,
পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামী স্কলারদের মধ্যে একটি বড় বিতর্কের বিষয় তাই এটি একেবারে পেলে দেওয়ার বিষয় না কারণ এটি হাদিসে আছে। সুতারাং তাশাহহুদে আঙ্গুল নড়ানো যাবে তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়, এটি সঠিক নিয়মে করলে সওয়াবের পাবেন। কিভাবে হাদিস অনুযায়ী সঠিক নিয়মে করবেন এই লিংকে দেখতে পারবেন ( নামাজে তাশাহুদ পড়ার সময় আঙুল নাড়ানোর হাদিস )।
Leave a Reply