তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত – তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করে ঘুমালে সে যদিও উঠতে না পারে তবুও আল্লাহ তার জন্য় সওয়াব লিখবেন ইনশাআল্লাহ । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাই সময় এ নামাজ নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা:) কে তা নিয়মিত পড়ার করার জন্য উংসাহীত করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়িয়া দোয়া করিলে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। এই নামাজ নিয়মিত আদায় করিলে আল্লাহ তার অভাব-অনটন দুর করেদেন, তার প্রয়োজন পূরন করিয়াদেন, তার চেহারা নুরানি-কিত করিয়াদেন। পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য় আল্লাহ বিশেষভাবে উংসাহ দিয়েছেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- “আর রাত্রির কিছু অংশে তা দিয়ে[ তাহাজ্জুদ পড়; এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। [বণী ইসরাইল :৭৯] “
এই নামাজে আল্লাহর সাথে বান্দার মধ্যে গবির সম্পর্ক তৈরি হয়। বুজুর্গরা বলেছেন, তাহাজ্জুদের নামাজ ফযিলতপূর্ণ ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন। তাদের মধ্যে একশ্রেণির মানুষ হলেন তারাই। যারা যত্নের সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেন। কুরআন শরীফে তাদেরকে মুহসেন ও মুত্তাকি নামে ডাকা হয়েছে। তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং আখেরাতে তাদের জন্য চিরন্তন সুখ ও সম্পদের অধিকারী করা হবে। তিনি ইরশাদ করেন ” নিশ্চয়ই মুত্তাকি লোক বাগ-বাগিচায় এবং ঝর্ণার আনন্দ উপভোগ করতে থাকবে এবং যে যে নিয়ামত তাদের প্রভূ তাদেরকে দিতে থাকবেন সেগুলো তারা গ্রহণ করবে। কারণ, নিসন্দেহে তারা এর পূর্বে (দুনিয়ার জীবনে) মুহসেনীন (বড় নেক্কার) ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশেই ঘুমাতো এবং শেষ রাতে ইস্তেগফার করতো। (কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাইতো ) ” । [সূরা যারিয়াত:১৫-১৮]
আরও পড়ুন : ৪০টি উদ্যোক্তা নারীদের জন্য লাভজনক ব্যবসায়িক আইডিয়া (2022)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ লোকের ওপর রহমত নাযিল করুন যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত (সালাত/নামাজ/নামাজ) আদায় করে। আবার নিজের স্ত্রীকেও সালাতের জন্যে জাগায়। যদি স্ত্রী না উঠে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতিও রহমত করেন যে
রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। আবার তার স্বামীকেও তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের জন্যে উঠায়। যদি স্বামী ঘুম থেকে না উঠে তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটে দেয়। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)।
( হাসান সহীহ : আবূ দাঊদ ১৩০৮, নাসায়ী ১৬১০, ইবনু মাজাহ্ ১৩৩৬, ইবনু খুযায়মাহ্ ১১৪৮, ইবনু হিব্বান ২৫৬৭ )
- তাহাজ্জুদ নামাজ কি?
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
- তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
- তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলায় নিয়ত
- মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত
- তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত
- তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত
- তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল ?
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
- মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
- তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ে কি কি আদব-শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত?
- তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া
- তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা
- তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজত
- তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয়
(১) তাহাজ্জুদ নামাজ কি?
তাহাজ্জুদ ( تهجد), শব্দটি আরবি শব্দ রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত। ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। তাহাজ্জুদ নামাজ একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং তার সাহাবীদের এটা পালনে উৎসাহিত করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে বিখ্যাত তাবাঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন :
هو ما كان بعد العشاء ويحمل على ما كان بعد الثوم –
“অর্থাৎ যে সমস্ত নামাজ ইশার নামাজের পর পড়া হয় তাকেই বলে তাহাজ্জুদ নামাজ। তবে নিয়ম অনুযায়ী কিছুক্ষণ নিদ্রিত থাকার পর নামাজ পড়াকে বুঝায়।”
আরও পড়ুন : নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এবং ওয়াজিবের কাজ কি
অন্য এক রেওয়াতে তাহাজ্জুদের পরিচয় এভাবে এসেছে:
وما كان بعد صلوة العشاء فهو من الليل –
” অর্থাৎ ইশার নামাজের পর যে নামাজ পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের অন্তর্ভুক্ত। “
তাহাজ্জুদ নামাজ এমন তীর যার লক্ষ কখনো ভ্রষ্ট হয় না। আপনি যদি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে “শীঘ্রই তোমার ‘রব’ তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে” (সূরা আদ-দুহ: ৫)। এটি নিরাপদে জান্নাত লাভের একটি উপায়।
” হে বস্ত্রাবৃত! রাতে জাগ্রত হউন, কিছু অংশ ব্যতীত। অর্ধেক রাত কিংবা তার চেয়ে। অথবা তার চেয়ে বেশি। আল-কুরআন আবৃত্তি করুন ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে। (সূরা মুযাম্মেলঃ ১-৪) “
(২) তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত :
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আপনি যে কোন ভাবে করলে হবে, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলায় নিয়ত ও বা তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত ও করতে পারবেন। আথবা মনে মনে নিয়ত করলেও হবে ইনশাআল্লহ, আল্লাহ তাআলা আপনার অন্তর খবর রাখেন।
(৩) তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত :
نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর ।
(৪) তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলায় নিয়ত :
আমি আল্লাহর অয়াস্তে কেব্লার দিকে মুখ করিয়া দু-রাকাত সুন্নাত তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করিলাম।
(৫) মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত :
মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত উপরে দেওয়া একি নিয়মে।
(৬) তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত বা তাহাজ্জুদ নামাজের সময় :
ইশারের নামাজ আদায়ের করার পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। কুরআনে রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার তাকীদ করা হয়েছে তার মর্ম এই যে, রাতের কিছু অংশ ঘুমিয়ে থাকার পর উঠে নামাজ পড়া। সর্বোত্তম তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হল, এশার নামাজের পর লোকেরা ঘুমাবে। তারপর অর্ধেক রাতের পর উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো মধ্য রাতে, কখনো তার কিছু আগে অথবা পরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে-ইমরানের শেষ রুকুর কয়েক আয়াত পড়তেন। তারপর মেসওয়াক ও অযু করে নামাজ পড়তেন। রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম । তাহাজ্জুদ নামাজের আল্লাহর কাছে একতা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা আছে। এই নামাজ পড়ে আপনি আল্লাহর কাছে যাই চাবেন আল্লাহ তাই দিবেন।
(ক) হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য উঠতেন তখন মিস্ওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ (দাঁত) পরিষ্কার করে নিতেন।
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৩৬)
(খ) আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেনঃ আল্লাহ্ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সালাত হল দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সালাত (নামাজ/নামাজ)। আর আল্লাহ্ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর সিয়াম। তিনি [দাউদ (আঃ)] অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশ তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রাতের ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি একদিন সিয়াম পালন করতেন, এক দিন করতেন না।
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০৬৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৩১ )
অল্প পুঁজিতে গ্রামে বসে ব্যবসা শুরু করার ভাল 10টি ব্যবসায়িক আইডিয়া
তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।”
(৭) তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত :
তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত নামাজ পড়া যায়। তবে দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। আপনার যদি সম্ভব হয় ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করুন। ১২ রাকাআত এর বেশি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় জায়েছ আছে। সম্ভব না হলে ৪ রাকাত আদায় করুন। কিন্তু কেউ যদি তাও না পারেন তহলে ২ রাকাত হলেও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা ভালো। তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই ,তবে আপনি যদি পড়তে চান জোহরের আগে পড়া ভাল (আল্লাহ দয়ালু কবুল করে নিবে)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।”
(গ) মুসলিম ও মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) … আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে দেখলাম তিনি إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ সুরা তেলাওয়াত করলেন এবং সিজদা করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম হে আবূ হুরায়রা! আমি কি আপনাকে সিজদা করতে দেখিনি? তিনি বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সিজদা করতে না দেখলে সিজদা করতাম না।
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭৪ )
(ঘ) আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি তাঁর খালা উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনা (রাঃ) এর ঘরে রাত কাটালেন। তিনি বলেন, আমি বালিশের প্রস্থের দিকে শুয়ে পড়লাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সহধর্মিণী বালিশের দৈর্ঘ্যে শয়ন করলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যরাত তার কিছু আগে বা পর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠে বসলেন এবং দু’হাতে মুখমণ্ডল মুছে ঘুমের আমেজ দূর করলেন। এরপর তিনি সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। পরে একটি ঝুলন্ত মশ্কের দিকে এগিয়ে গেলেন এর পানি দ্বারা উত্তমরূপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে সালাত (নামাজ/নামাজ) দাঁড়িয়ে গেলেন।
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে পড়লাম এবং তিনি যেরূপ করেছিলেন, আমিও সেরূপ করলাম। এরপর আমি তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপরে রেখে আমার ডান কান মোচড়াতে লাগলেন (এবং আমাকে তাঁর পিছন থেকে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।)
তিনি তখন দু রাকা’আত সালাত (নামাজ/নামাজ) আদায় করলেন, তারপর দু’ রাকা’আত, তারপর দু’ রাকা’আত, তারপর দু’ রাকা’আত, তারপর দু’ রাকা’আত, তারপর (শেষ দু’ রাকা’আতের সাথে আর এক রাকা’আত দ্বারা বেজোড় করে) বিত্র আদায় করে শুয়ে পড়লেন। অবশেষে (ফজরের জামা’আতের জন্য) মুআয্যিন এলেন। তিনি দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত (কিরাআতে) দু’ রাকা’আত (ফজরের সুন্নাত) আদায় করলেন। এরপর (মসজিদের দিকে) বেরিয়ে যান এবং ফজরের সালাত আদায় করলেন।
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১১২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৯৮ )
(৮) তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল ?
তাহাজ্জুদের নামাজ সুন্নত নাকি নফল দেখুন তাহাজ্জুদের নামাজ সুন্নত ও নফল ও। নফল মানে হল এক্সট্রা নফল মানে অতিরিক্ত ফরজের অতিরিক্তটাকে নফল বলে ,আর সুন্নাত মানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন করতে বলেছেন। তাহাজ্জুতের নামাজ ফরজের এক্সট্রা সে হিসেবে এটা নফল আবার, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন করতে বলেছেন সেই হিসাবে এটা কি সুন্নত, তাহলে তাহাজ্জুদের নামাজ সুন্নাতে বলা যায় নফল বলা যায়। যেমন আপনি এখন দুই রাখাত নামাজ পড়লেন এমনে, বা দূপুর বেলা দুই রাকাত নামাজ পড়লেন মনে চাইল,অথবা আপনার দরকার হলো দুই রাকাত নামাজ পড়লেন তাহলে এটা হল শুধু নফল সুন্নত না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন করতে বলেছেন আবার এক্সট্রা সেটাকে সুন্নত বলে নফল বলে।
(৯) তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম :
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করার পর, সাভাবিক অন্যান্য নামাজের মতন এই নামাজ আদায় করা।
প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
তারপর ছানা পড়া।
সুরা ফাতেহা পড়া।
সুরা মিলানো তথা যেকোন সুরা পড়া।( রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। )
এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
(১০) মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম :
তাহাজ্জুদ নিয়ত করার পরে মহিলারা অন্যান্য নামাজের মতন এই নামাজ আদায় করিবে।
(১১) তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ে কি কি আদব-শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত ?
(ক) তাহাজ্জুদ পড়বে এ নিয়ত করে ঘুমানো। এরপরও যদি জাগতে না পারে তাহলেও তাহাজ্জুদের সাওয়াব পেয়ে যাবে। আর তার ঘুমটা হবে তার জন্য সদাকাহ (নাসাঈ: ১৭৮৪)
(খ) জাগ্রত হয়েই চেহারাসহ মুখ মুছে নিয়ে ঘুম দূর করে নেবে, আল্লাহকে স্মরণ করবে, অর্থাৎ পড়বে আল্লাহু আকবার, আল-হামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহি, সুবহানাল মালিকিল কুদুস, আস্তাগফিরুল্লাহ এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অতঃপর মিসওয়াক করবে এবং তারপর এ দু’আ পড়বে..
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকালাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। সুবহা-নাল্লাহি, ওয়ালহামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম, রাব্বিগফির লী … এরপর যাই চাইবে তাই কবুল হয়ে যাবে। (বুখারী: ১১৫৪)
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁরই; আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। সুউচ্চ সুমহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। হে রব্ব ! আমাকে ক্ষমা করুন
(গ) সূরা আলে-ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করা (বুখারী: ১৮৩) ।
(ঘ) প্রথমে হালকাভাবে দুই রাকআত পড়ে নেবে (মুসলিম)
(ঙ) তাহাজ্জুদ নিজ ঘরে পড়া মুস্তাহাব। কেননা, ফরজ ছাড়া বাকি (নফল-সুন্নাত) সালাত ঘরে আদায় করা উত্তম (বুখারী: ৭৩১)।
(চ) তাহাজ্জুদের সালাত নিয়মিত পড়া, চলমান রাখা, বাদ না দেওয়া (বুখারী: ১১৫২)
(ছ) তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেলে সালাতে বিরতি দিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া (বুখারী: ২১২)।
(জ) মুস্তাহাব হলো তার পরিবার পরিজনকেও জাগিয়ে দেওয়া, যেন তারাও তাহাজ্জুদ পড়তে পারে (বুখারী: ৯৯৭)।
(ঝ) ঘুম থেকে না জাগলে মুখে পানি ছিটিয়ে দেওয়া (নাসাঈ: ১৬১০)।
আপনি যদি এগুলো মেনে চলেন তাহলে অনেক সওয়াবের অধিকারি হবেন। এগুলো যদি নাও পারেন শুধু তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে হবে।
(১২) তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া :
তাহাজ্জুদ নামাজে যে দোয়া পড়িবেন
তাহাজ্জুদ নামাজে সময় এই দোয়া গুলো যদি পড়তে নাও পারেন, শুধু তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করে সালাত আদায় করলে হবে।
(ক) প্রিয়নবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য ওঠে কুরআনের এ আয়াতসহ সুরা আল-ইমরানের শেষ দশ পর্যন্ত পড়তেন। –
(বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)
رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ – رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা মা খালাক্বতা হাজা বাত্বিলান, সুবহানাকা ফাক্বিনা ‘আজাবান্নার। রাব্বানা ইন্নাকা মাং তুদখিলিন্নারা ফাক্বাদ্ আখঝাইতাহু, ওয়া মা লিজজ্বালিমিনা মিন্ আংছার। রাব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিআই ইউনাদি লিল ইমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না; রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ্ফির আন্না সাইয়্যেআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরার।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। পবিত্রতা তোমারই জন্য। আমাদেরকে তুমি জাহানড়বামের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি যাকে জাহানড়বামে নিক্ষেপ কর তাকে অপমানিত কর। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনার জন্য একজন আহবানকারীকে আহবান করতে শুনে ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের সকল গোনাহ মাফ করে দাও। আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেক লোকদের সঙ্গে আমাদের মৃত্যু দাও।’
(খ) শারীকুল হাওযানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে প্রশ্ন করেছি, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে ঘুম থেকে সজাগ হওয়ার পর কোন জিনিস দিয়ে ’ইবাদাত আরম্ভ করতেন। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, তুমি আমাকে এমন বিষয় জিজ্ঞেস করেছ যা তোমার পূর্বে আমাকে কোন লোক জিজ্ঞেস করেনি। তিনি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠার পর প্রথম দশবার ’আল্ল-হু আকবার’ পাঠ করতেন। ’আলহামদু লিল্লা-হ’ বলতেন দশবার। ’’সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী’’ পাঠ করতেন দশবার। ’’সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস’’ পাঠ করতেন দশবার। ’আস্তাগফিরুল্ল-হ’ পাঠ করতেন দশবার। ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ পাঠ করতেন দশবার। আর দশবার পড়তেন এ দু’আ, ’’আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন যীক্বিদ্ দুন্ইয়া ওয়া যীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়া-মাহ্’’। এরপর তিনি (তাহাজ্জুদের) সালাত (সালাত/নামাজ/নামাজ) আরম্ভ করতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ ১২১৬ (মিশকাত) )
(গ) আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন, তখন দু’আ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ، لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ،
وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ،
وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা। লা ইলাহা গাইরুকা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই, আপনিই আসমান-জমিন ও উভয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং এর মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের নুর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য। (পরকালে) আপনার সাক্ষাৎ সত্য। আপনার বাণী সত্য। আপনার জান্নাত সত্য। আপনার জাহান্নাম সত্য। আপনার (প্রেরিত) নবিগণ সত্য। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য, কেয়ামত সত্য।
হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম, আপনার ওপর ঈমান আনলাম, আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনার দিকেই রুজু করলাম, আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের প্রকাশ্য ও গোপন সব পাপ/অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই শুরু এবং আপনিই শেষ মালিক। আপনি ব্যতিত সত্য কোনো প্রকৃত ইলাহ নেই অথবা আপনি ব্যতিত (ইবাদতের উপযুক্ত) অন্য কেউ নেই।’
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০৫৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১২০)
(১৩) তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা :
যে কোনো সুরা দিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ নামাজ আদায় করা যায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত নামাজ আদায় করতেন। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা দীর্গ করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে তেলোয়াত করা জায়েজ আছে। তবে অন্য কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি তেলোয়াত করা উত্তম।
(ক) তিলাওয়াত দীর্ঘ করা, এক পারা বা এর কম-বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ (স) তাহাজ্জুদের সালাত এমনই দীর্ঘ করতেন যে, কেউ কেউ কাহিল হয়ে বসে পড়তে ইচ্ছা করতো। (বুখারী: ১১৩৫) হুযাইফা (রা) দেখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স) চার রাকআত তাহাজ্জুদের সালাতে সূরা বাকারা, আলে-ইমরান, আন-নিসা, আল-মায়িদা ও আল-আনআম (মোট ছয় পারা) তিলাওয়াত করেছেন।
(আবু দাউদ, সলাতুল মুমিন- ১/৩৬৮)
( আবার কখনো এক রাকাআতেই সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরান পুরো এবং সূরা নিসার অংশবিশেষ পড়েছেন। তাছাড়া তাহাজ্জুদের সালাতে রাসূলুল্লাহ (স)-এর এক একটি সিজদা এত দীর্ঘ হতো যে, এর মধ্যে ৫০টি আয়াত তিলাওয়াত করা যেতো। )
(খ) সশব্দে ও নিঃশব্দে তিলাওয়াত করা: পাশের কারোর বিরিক্তর কারণ না হলে তাহাজ্জুদের সালাত সশব্দে তিলাওয়াত করা উত্তম। আর কেউ বিরক্ত হলে তিলাওয়াত করবে নিঃশব্দে। রাসূলুল্লাহ (স) কখনো জোরে, কখনো আস্তে উভয়ভাবেই পড়েছেন। (আবু দাউদ: ১৪৩৭) অপর এক হাদীসে আছে, তাহাজ্জুদে আবু বকর (রা) নিঃশব্দে এবং উমর (রা) সশব্দে তিলাওয়াত করেছেন।
(আবু দাউদ: ১৩২৯)
(১৪) তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজত :
অবশ্য়য় তাহাজ্জুদ নামাজের পর মোনাজত করবেন কারণ তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া কবুল হয় । নির্দিষ্ট কোন তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজত নাই আপনার যা যা প্রয়োজন সব কিছু আল্লাহ তাআলা দরবারে পেশ করিবেন। এই গুনাগার বান্দাকেও আপনার দোয়ার মধ্যে শরিক করিয়েন।
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। সূরা বাকারা : ২০১
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি করতেন।
(ক) সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) … উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রাতে জেগে ওঠে এ দু’আ পড়ে ……لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ এক আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। রাজ্য তাঁরই। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনই সব কিছুর উপরে শক্তিমান। যাবতীয় হামদ আল্লাহরই জন্য, আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য ইলাহ্ নেই। আল্লাহ মহান, গুনাহ থেকে বাঁচার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই আল্লাহর তাওফীক ব্যতীত। তারপর বলে, ইয়া আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন। বা (অন্য কোন) দু’আ করে, তাঁর দু’আ কবূল করা হয়। এরপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে (সালাত আদায় করলে) তার সালাত (নামাজ/নামাজ) কবূল করা হয়।
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০৮৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৫৪ )
(১৫) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে কি হয় :
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে আল্লাহ আপনাকে ভাল কাজ করার তৌওফিক দান করবেন। তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ত করিয়া (লোক দেখা নিয়ত ছাড়া) নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়িলে, আল্লাহ আপনার সব আশা আকাঙ্খা পূরন করবেন। যাদের সন্তান হয় না তারা যদি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে দোয়া করেন আল্লাহ কুলে সন্তান দান করিবেন।
(ক) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) … আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ ”কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছ এমন যে, আমার কাছে চাইবে ? আমি তাকে তা দিব। কে আছ এমনে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব।
( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১১৪৫ ) ”
প্রকৃতপক্ষে তাহাজ্জুদ নামাজ মন পবিত্র ও চরিত্রকে ঠিক রাকার জন্য় এবং সত্য পথে অবিচল থাকার জন্যে কার্যকর পন্থা। তাই তাহাজ্জুদ নামাজ ফযিলতপূর্ণ ও বরকতময় নামাজ। আল্লাহপাক বলেন বস্তুতঃ রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্যে খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা যিকির একেবারে যথার্থ। “[সূরা মুয্যাম্মিল-৬]”
যার একমাত্র আল্লাহপাকের জন্য় তাহাজ্জুদ নামাজের আদায় করে।
এসব বান্দাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁর প্রিয় বান্দা বলেছেন এবং নেকার ও ঈমানদারির সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।
[সূরা ফুরকান:৬৩-৬৪]আল্লাহ তাআলা সবাইকে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।(আমিন)
Leave a Reply