নামাজ বেহেসতের চাবি। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজেই হিসাব হবে। যার নামাজ ঠিক হবে, তবে তার সব আমল সঠিক বলে বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সব আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। ফজরের নামাজের উত্তম সময় এর দলিল হিসেবে অনেক হাদিস রয়েছে তার মধ্যে একটি হল : হাফসা ইবনু উমর (রহঃ) ….. আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী আপরজনকে চিনতে পারত । সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৪১)। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশা ও ফজরের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ‘যে ফজরের নামাজ আদায় করল সে আল্লাহর পক্ষ থেকে জামানত লাভ করল। অতএব হে আদম সন্তান! লক্ষ রেখো আল্লাহ যেন অবশ্যই তোমাদের কাছে তার জামানতের কিছু দাবি না করেন।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৫৭ ) ‘
যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামাজ আদায় করলো, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়লো। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়লো, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়লো। ’ (মুসলিম শরিফ)। এ দুই সময় মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে জামাত দুটিতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে। এ জন্য হাদিসে এর প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। যারা ফজরের নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা নিয়ে দিন শুরু করতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে সারাদিন কাজ করমে দেহ-মন সজীব-সতেজ থাকে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের (ফজরের ও আসরের নামাজ) আগে নামাজ আদায় করবে সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’ সহিহ মুসলিম : ৬৩৪
♦ ফজরের আযানের সময়
সুবহে সাদেক থেকে ফজরের আযানের সময় শুরু হয়। সুবহে সাদেক থেকে রোজাদারের জন্য পানাহার নিষিদ্ধের সময় শুরু হয়। আর সুবহে সাদেক বলা হয় সেই সময়কে, যে সময়ে ভোরের আলো পূর্ব আকাশে উত্তর-দক্ষিণে বিস্থির্ণ অবস্থায় দেখা যায়। আর ফজরের নামাজের শেষ সময় হল সূর্যোদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত।
আারও পড়ুন নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি এবং ওয়াজিবের কাজ কি
♦ সময় মতো নামাজ পড়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
فَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
অতঃপর নামাজ ঠিক করে পড়। নিশ্চয়ই নামাজ মুসলমানদের উপর ফরজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
নামাজের মধ্যে যেমন ফজরের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব, তেমনি সময়ের মধ্যে ফজরের সময়ের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। (সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫২০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৪৭) । মানবজীবনের যাবতীয় বরকতের অন্যতম উৎস বলা হয়েছে ফজরের নামাজকে।
উমর ইবনু হাফস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপর ফজর ও ইশার সালাতের চাইতে অধিক ভারী সালাত (নামায/নামাজ) আর নেই। এ দুই’সালাতের কি ফযীলত, তা যদি তারা জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা (জামা’আতে) উপস্থিত হতো। ( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৬২৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৫৭)
আবূ আসিম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে এবং ভুমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তিরা শহীদ। যদি লোকেরা জানত যে, প্রথম ওয়াক্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে কি ফযীলত, তা হলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করত। আর ইশা ও ফজরের জামা’আতের কি মর্তবা তা যদি তারা জানত তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত এবং সামনের কাতারের কী ফযিলত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুরআ ব্যবহার করত। (সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৬৮৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭২০ – ৭২১)
♦ ফজরের নামাজের উত্তম সময় বা ফজরের ওয়াক্ত সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা :
একাধিক হাদিসের বর্ণনায় ফজরের নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ফজরের নামাজের উত্তম সময় হল সুবহে সাদেক প্রথম ওয়াক্তে ‘গালাসে’(একটু অন্ধকার অন্ধকার ভাব সময়ে) পড়া উত্তম। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাজ পড়তেন। অতঃপর মহিলারা তাদের চাদর জড়িয়েই নিজ নিজ বাসায় ফিরে যেতেন। কিন্তু অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
২. আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফেরেশতাগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) উভয় দল একত্র হন। তারপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। উত্তরে তাঁরা বলেনঃ আমরা তাদের সালাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তারা সালাত রত ছিলেন।
(সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৫৫)
আারও পড়ুন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত ওয়াক্ত ও ফজিলত এবং অন্যান্য বিষয়
৩. হাফসা ইবনু উমর (রহঃ) ….. আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, যখন আমাদের একজন তার পার্শ্ববর্তী আপরজনকে চিনতে পারত। ( সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৪১)
আল্লাহ আমাদেরকে সাবাই কে জামাতের সাথে এবং নিয়মিত ফজরে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন (আমিন) । পোষ্টি ভাল লাগলে শেয়ার করুন।
♦ আজ বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২, ৩০ কার্তিক ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৪ হিজরি। ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো-
🌹 ফজর – ৪:৫৫ মিনিট
🌹জোহর – ১১:৪৬ মিনিট।
🎆 আসর- ৩:৩৮ মিনিট।
🌹 মাগরিব- ৫:১৭ মিনিট।
🌹 এশা- ৬:৩৩ মিনিট।
♦ আজকের সূর্যোদয় সময়- ৬:১১ মিনিট 16.11.2022 ।
♦ আজকের সুর্যাস্ত সময়- ৫:১৭ মিনিট 16.11.2022 ।
বিভাগীয় শহরের জন্য উল্লেখিত সময়ের সঙ্গে কিছু বিভাগে সময় যোগ এবং কিছু বিভাগে সময় বিয়োগ করতে হবে, তাহলো-
বিয়োগ করতে হবে-
🕹 চট্টগ্রাম : -০৫ মিনিট
🕹 সিলেট : -০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে-
🎆 খুলনা : +০৩ মিনিট
🎇 রাজশাহী : +০৭ মিনিট
🎇 রংপুর : +০৮ মিনিট
🎆 বরিশাল : +০১ মিনিট
♦ আজকের ফজরের আজানের সময় 16.11.2022
🌹 4.49
♦ আজকের ফজরের নামাজের সময় 16.11.2022
🌹 4.55
♦ আজকের ফজরের নামাজের শেষ সময় 16.11.2022
🌹 6.07 am
♦ আজকের সূর্যোদয় সময় 16.11.2022
🌹 6.11 am
আজকের সুর্যাস্ত সময় 16.11.2022
🌹 5.17 pm
Leave a Reply