পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের ফজিলত অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ফজরের নামাজ আদায়ের ফলে ব্যক্তির মন ফুরফুরে,প্রফুল্ল হয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিন ফজর ও আসরে সময় ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে বান্দার রিপোর্ট পেশ করে (বুখারী: ৫৫৫)। অন্য এক হাদীসে আছে, যে আসরের সালাত আদায় করল না তার সকল আমল বাতিল হয়ে গেল। (বুখারী: ৫৫৩)। এগুলো জানার পর কারো আর ফজর সালাতের প্রতি গাফেলতি, অলসতা আসবে না। ইনশাআল্লাহ!
ফজরের নামাজ (আরবি: صلاة الفجر সালাতুল ফজর,) মুসলমানদের অবশ্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদায় করতে হবে । তার মধ্যে অন্যতম ফজরের নামাজ। নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম অংশ। ফজরের সালাতের কথা সূরা নূরের ২৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
১০টি গুরুত্বপূর্ণ ফজরের নামাজের ফজিলত ও উপকারিতা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
(১) ফজরের নামাজ হচ্ছে মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন – মুনাফিকদের উপর ফজর ও এশার নামাজের চাইতে অধিক ভারী নামাজ আর নেই। এ দুই’নামাজের কি ফযীলত, তা যদি তারা জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা নামাজে উপস্থিত হতো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আমি সংকল্প করছিলাম যে, মুয়ায্যিন কে ইকামত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে এরপরও যারা সালাতে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই।
(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাআতের সাথে আদায় করে এরপর সে লোক আল্লাহর যিম্মায় চলে যায়। সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সেদিন সে লোক আল্লাহর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকে। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির দায়িত্ব নিয়ে নেন। (সহিহ মুসলিম, তিরমিজি )
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে, ফেরেশতারা ওই ব্যক্তিকে ভালো মানুষ হিসেবে সাক্ষী দেবে আল্লাহর কাছে। ফেরেশতারা প্রতিদিন ফজর ও আসরের সময় একত্রিত হয়। যে সব ফেরেশতা বান্দার সাথে রাত্রি যাপন করার পরে উপরে গমন করে তাদেরকে আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাকে কি অবস্থায় রেখে এসেছ? উত্তরে ফেরেশতা বলেন, তাদেরকে সালাত আদায়রত অবস্থায় রেখে এসেছি এবং আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তাদেরকে সালাত আদায়রত অবস্থায় পেয়েছিলাম। (বুখারি, মুসলিম)।
(৪) রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করে, আল্লাহ তায়ালা তার আমলে দাঁড়িয়ে সারারাত নফল নামাজ আদায়ের সওয়াব দিয়ে দেন! (সহিহ মুসলিম: ১০৯৬)।
(৫) রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভোরে হেঁটে হেঁটে ফজরের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার জন্য পরিপূর্ণ আলো দান করবেন। (আবু দাউদ: ৪৯৪)।
আরও পড়ুন : ফজরের নামাজের নিয়ত এবং নিয়ম
(৬) যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত দান করবেন। অথাৎ সে আল্লাহর দিদার লাভ করবে, এবং জান্নাতি ওই ব্যক্তি আল্লাহকে পূর্ণিমার রাতের আকাশের চাঁদের মতোই স্পষ্ট দেখবে। (বুখারি: ৫৭৩)।
(৭) যে ব্যক্তি নিয়মিত ফজরের সালাত আদায় করবে, সে কখোনোই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (সহিহ মুসলিম: ৬৩৪)।
(৮) ফজরের সালাত আদায়কারী, রাসূল (সা.) এর বরকতের দোয়া লাভ করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)।
(৯) ফজরের দুরাকাত সুন্নত সালাত, দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম। (জামে তিরমিজি: ৪১৬)।
(১০) যে লোক এশার নামাজ জামাআতে পড়ল সে যেন অর্ধেক রাত্রি দাড়িয়ে সালাত আদায় করল। আর যে লোক এশা এবং ফজরের নামাজ জামাআতে পড়ল সে যেন সারা রাত নামাজ পড়ার সওযাব লাভ করবে (মুসলিম)।
🌹 ফজরের নামাজের দোয়া :
রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর, আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। -সূরা বাকারা : ২০১
🌹 ফজরের নামাজের পর যিকির-আযকার করবেন :
যে লোক ফজরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করে সেখানে বসেই সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত যিকির-আযকার করতে থাকে এবং অতঃপর দুই রাকআত (ইশরাকের) সালাত আদায় করে আল্লাহ তাকে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব দান করেন।(তিরমিযী: ৫৮৬)
১) সুবাহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুল্লিলাহ ৩৩ বার , আল্লাহু আকবার ৩৪ বার।
২) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। ১০০ বার
৩) যেকোন দুরুদ শরীফ । সব ছেয়ে ছোট দুরুদ শরীফ হলো ( صلى الله عليه وسلم . উচ্চারণ : ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। ১০০ বার
৪) ইস্তেগফার । সব ছেয়ে ছোট ইস্তেগফার ( আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি)। ১০০ বার
৫) লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ । ১০০ বার
৬) লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকালাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। ১০০ বার
🎆 ফজরের নামাজের নিয়ম মহিলাদের :
♦ফজরের নামাজের নিয়ত করার পর, সাভাবিক অন্যান্য নামাজের মতন এই নামাজ আদায় করা।
- প্রথমে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবে তার পরে দুই রাকাত ফরজ আদায় করবে।
- প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
- তারপর ছানা পড়া।
- সুরা ফাতেহা পড়া।
- সুরা মিলানো তথা যেকোন সুরা পড়া।( রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। )
🎆 ফজরের নামাজের সূরা :
যে কোনো সুরা দিয়েই তাহাজ্জুদ নামাজ নামাজ আদায় করা যায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত নামাজ আদায় করতেন।
পরিশেষে একটি কথা বলি ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। যে নিয়মিত ফজরে নামাজ আদায় করে সেই একমাত্র বুঝতে পারবে। আল্লাহ আমাদের নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়ার তৈফিক দান করুন। (আমিন)
Leave a Reply